বিজেপি কর্মীর মৃত মায়ের দেহ পড়ে রয়েছে মর্গে : রাজনৈতিক টানাপোড়েন অব‍্যাহত

6th May 2021 8:38 am বর্ধমান
বিজেপি কর্মীর মৃত মায়ের দেহ পড়ে রয়েছে মর্গে : রাজনৈতিক টানাপোড়েন অব‍্যাহত


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :  ভোটে ভরাডুবির পর ভয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছেন বিজেপি নেতারা। ভয় এতটাই ,যে রাজনৈতিক হিংসায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের নবগ্রামে দলের কর্মীর মা মারা যাবার পরেও দেখা নেই কোনও বিজেপি নেতারা।গ্রেপ্তারির ভয়ে মৃতার ছেলে সহ পরিবারের অন্যরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের পর নিহত কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহ তাই বর্ধমান পুলিশ মর্গ থেকে আনতে যাওয়ারও কেউ নেই । বর্ধমান হাসপাতালের পুলিশ মর্গেই পড়ে আছে নবগ্রামের বিজেপি কর্মী আশিস ক্ষেত্রপালের মায়ের মৃতদেহ। নেতাদের এমন আচরণে কার্যতই হতাশ বিজেপির নিচু তলার কর্মী ও সমর্থকরা । 


ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় গত সোমবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জামালপুরের নবগ্রামের ষষ্ঠিতলা এলাকা।তৃণমূল ও বিজেপির সংঘর্ষে দুই তৃণমূল কর্মী শাজাহান শা ওরফে সাজু (৩০)এবং বিভাস বাগ (২৭) এর মৃত্যু হয় ।একই সংঘর্ষে মৃত্যু হয়  নবগ্রামের বিজেপি শক্তি প্রধান আশিস ক্ষেত্রপালের মা কাকলি ক্ষেত্রপাল (৪৭)।এই ঘটনার পরেই পুলিশ ,র‍্যফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনা স্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি ধরপাকড় অভিযানে নামে ।তা দেখেই নিহত কাকলির ছেলে সহ এলাকার অন্য বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা গা ঢাকা দেয় ।তারই মধ্যে দুই পক্ষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিজেপির ১০ জন ও ১ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তার করে  মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে । 


জামালপুর হাসপাতালে কর্মীদের কথায় জানা গিয়েছে কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহ সোমবার জামালপুর হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকে ।কিন্থু তাঁর পরিবারের কেউ হাসপাতালে  ছিলেন না ।পরে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। জামালপুর থানার পুলিশ মঙ্গলবার মৃত দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে পাঠায়। কিন্তু না হাসপাতাল ,না মর্গ , না থানা ,না ঘটনাস্থল কোথাও দেখা মেলেনি বিজেপি নেতাদের । শুধুমাত্র ঘটনার কথা জানার পরে সোমবার জামালপুরের তৃণমূলের নেতারা নবগ্রামে হাজির হন। পরে নিহত তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতেও তারা যান ।এমনকি ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ নিহতদের বাড়িতে ফেরার পর শেষ কৃত্যেও  তৃণমূলের নেতারা হাজির থাকেন । কিন্তু  সোমবারের পর মঙ্গলবারেও বিজেপির জেলা বা ব্লক স্তরের কোনও নেতা নিহত ও আহত বিজেপি কর্মী পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা টুকুও দেখান নি । তাই ময়নাতদন্তের পর বিজেপি কর্মীর নিহত মা কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহ বর্ধমানের মর্গেই পড়ে থাকলো বলে বিজেপির কর্মীরা আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিন ) আমিনুল ইসলাম খানের সঙ্গে  যোগাযোগ করা হলে তিনিও ঘটনা সত্য বলে জানিয়েছেন । 

 
ভোটের আগে বিজেপি নেতারা প্রতি মুহুর্তে হুংকার ছাড়তেন । রাজ্যের কোথাও কোন বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে বিজেপি নেতারা দলের কর্মীদের নিয়ে অন্দোলনে নেমে পড়তেন ।কোথাও পথ অবরোধ করো বিক্ষোভ দেখাতেন আবার কোথাও থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতেন। কিন্তু গত রবিবার ভোটের ফল ঘোষনায় পর থেকে পূ্র্ব বর্ধমান জেলার বিজেপি নেতারা  কেন একেবারে আত্মগোপন করে ফেললেন তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না নিচু তলার কর্মীরা। এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা-র  ফোন নম্বারে একাধীক বার ফোন করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি । জামালপুর বিধানসভার বিজেপি আহ্বায়ক জিতেন ডকাল বুধবার দুপুরে বলেন ,’ তিনি কোথাও যান নি । নিহতের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর জন্যে তিনি মণ্ডল সভাপতিদের বারবার বলেছেন । কিন্তু তাারা না গেলে কিবা আর করার আছে বলে জিতেন ডকাল এদিন মন্তব্য করেন । একই সঙ্গে তিনি বলেন , জামালপুর নিবাসী সিপিএম নেতা সমর ঘোষ তাঁকে  ফোন করে জানিয়েছিলেন তারা মর্গ থেকে কাকলি ক্ষেত্রপালের দেহ আনতে যাবেন ।তবে সিপিএম নেতারা বুধবার দেহ আনতে গেছেন কিনা তা তিনি জানেন না’ । 
জামালপুর বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দিতা করা বিজেপি প্রার্থী বলরাম ব্যাপারি বলেন, ’নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে তিনি এলাকার মণ্ডল সভাপতি তপন বাছার কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন 
কিনা তা তিনি জানেন না ’। সিপিএম নেতা সমর ঘোষ এদিন দুপুরে দাবি করেছেন,“নিহত কাকলি ক্ষেত্রপাল তাঁদের সিপিএম পার্টির সাধারণ সদস্য ছিলেন । তাই এদিনও তাঁরা নিহতের মৃতদেহ  বর্ধমানের মর্গ থেকে বাড়িতে আনানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন“ । সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে ,কাকলি ক্ষেত্রপালের মৃতদেহের শেষ কৃত্য সম্পন্ন করার জন্যে পুলিশ হুগলি নিবাসী মৃতার মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ।  
 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।